শেখ রাসেলের জন্মদিন ও শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন,সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি,জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল’র ৫৯তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে শিশু রাসেলের জীবন সম্পর্কে শিশু-কিশোরদের কাছে তুলে ধরতে প্রতি বছর তাঁর জন্মদিনকে শেখ রাসেল দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্বিতীয়-বারের মতো পালিতব্য শেখ রাসেল দিবস ২০২২এর নির্ধারিত প্রতিপাদ্য শেখ রাসেল নির্মলতার প্রতীক দুরন্ত প্রাণবন্ত নির্ভীক যথার্থ হয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী মনে করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,শেখ রাসেল ১৯৬৪সালের ১৮অক্টোবর ঢাকার ধানমন্ডি ৩২নম্বর সড়কের বাসায় জন্মগ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অত্যন্ত প্রিয় লেখক ছিলেন খ্যাতনামা দার্শনিক ও নোবেলজয়ী বার্ট্রান্ড রাসেল।জাতির পিতা বার্ট্রান্ড রাসেলের বই পড়ে বঙ্গমাতাকে ব্যাখ্যা করে শোনাতেন।তাই বঙ্গবন্ধু আর বঙ্গমাতা দু’জনে মিলে শখ করে,তাদের আদরের ছোট ছেলের নাম রেখেছিলেন রাসেল।রাসেল নামটি শুনলেই প্রথমে যে ছবিটি সামনে আসে,তাহলো হাস্যোজ্জ্বল,প্রাণচঞ্চল এক ছোট্ট শিশুর দুরন্তপণা,যে শিশুর চোখগুলো হাসি-আনন্দে ভরপুর।মাথা ভর্তি অগোছালো চুলের সুন্দর একটি মুখাবয়ব-যে মুখাবয়ব ভালোবাসা ও মায়ায় মাখা।
শেখ হাসিনা বলেন,কোমলমতি শিশু রাসেলকে আমরা হারিয়েছি ১৯৭৫সালের ১৫আগস্টের ইতিহাসের এক নির্মম,জঘন্য ও বিভীষিকাময় রাতে স্বাধীনতাবিরোধী,ষড়যন্ত্রকারী ও বিশ্বাসঘাতকদের হাতে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের ১৮জন সদস্য শহীদ হন ঐ কালরাতে।সেদিন ছোট্ট শিশু রাসেলও খুনিদের হাত থেকে রেহাই পায়নি।রাসেল তো বাঁচতে চেয়েছিল।বাঁচার জন্য ঘাতকদের কাছে আকুতি জানিয়েছিল,মায়ের কাছে যাবার কথা বলেছিল।মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ঘাতকরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,বিভীষিকাময় সেই রাতের প্রতিটি মুহূর্ত এখনও গভীর শোকের সঙ্গে স্মরণ করি।এখনও ভাবি,কারো বিরুদ্ধে শত্রুতা থাকতেই পারে,কিন্তু সেই ক্ষোভ একজন কোমলমতি শিশুকে কেন কেড়ে নিবে?এই শিশু কী দোষ করেছিল?সেতো কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না।সে কেন এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের অংশ হবে?এতসব স্মৃতি স্মরণ করতে কষ্ট হয়।চোখ ভিজে ওঠে,বুকে পাথর বেঁধে সেইসব স্মৃতির সাগরে ডুব দেই।কারণ সেদিন ঘাতকের বুলেট যে কোমলমতি শিশুটির প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল,সে ছিল নির্দোষ-নিষ্পাপ।মহানুভবতা ও ব্যবহারে সে ছিল অমায়িক।রাসেল যদি বেঁচে থাকতো,তাহলে হয়তো মহানুভব,দূরদর্শী ও আদর্শ নেতা আজ আমরা পেতাম,যাকে নিয়ে দেশ ও জাতি গর্ব করতে পারতো।
শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।শহীদ শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আজ সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত শেখ রাসেলসহ ১৫আগস্টে নিহত সকল শহীদদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ,ফাতেহা পাঠ,মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ,সহযোগী সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের শুভ জন্মদিন শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিতে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয় নেতাকর্মী,সমর্থক ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
একইসাথে তিনি সারাদেশে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সকল স্তরের নেতাকর্মীর প্রতি বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।এ ছাড়াও আজ জাতীয়ভাবে সারাদেশে একযোগে এবং বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহে শেখ রাসেল দিবস-২০২২ পালিত হবে।দিবসটি উপলক্ষে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে সকাল ৬টায় বনানী কবরস্থানে শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিবসটির কার্যক্রম শুরু হবে।সকাল সাড়ে ৬টায় স্ব স্ব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বা দপ্তর বা সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান ও প্রাঙ্গণে শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হবে।দিবসটিতে আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে সকাল সাড়ে ৭টায় পরিকল্পনা কমিশন-এর সামনে হতে বিআইসিসি প্রাঙ্গণ পর্যন্ত সকলের অংশগ্রহণে র্যালী অনুষ্ঠিত হবে।সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের(বিআইসিসি)হল অব ফেম-এ শেখ রাসেল দিবসের উদ্বোধন ও শেখ রাসেল পদক প্রদান করবেন।বেলা আড়াইটায় শেখ রাসেলের নির্মম হত্যাকাণ্ড ন্যায় বিচার,শান্তি ও প্রগতির পথে কালো অধ্যায় শীর্ষক জাতীয় সেমিনার একই স্থানে সন্ধ্যা ৬টায় কনসার্ট ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস অনুষ্ঠিত হবে।
এ ছাড়া দিবসটি উপলক্ষে দেশের সকল বিভাগ,জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের উদ্যোগে চিত্রাঙ্কন,দাবা,জাতীয় ফুটবল টুর্নামেন্ট ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।